প্রত্যয় ইউরোপ ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের জয়কে ইউরোপের বেশির ভাগ দেশই ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। তারা আশা করছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় আটলান্টিকের দুই পাড়ের সম্পর্কে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা কেটে যাবে।
ট্রাম্প সবাইকে নিয়ে চলার প্রথাগত রীতি ভেঙে একলা চলার নীতি অনুসরণ করেন। তার দৃষ্টিভঙ্গি বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রের একার নয়। আমেরিকা ফার্স্ট নীতি অনুসরণ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে তিনি বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। আশা করা হচ্ছে, বাইডেন প্রতিশ্রুতি মতো তার দেশকে বিশ্ব অঙ্গনে আবার ফিরিয়ে আনবেন। এর ফলে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর ইউরোপীয় নেতৃত্বেও স্বপ্ন হোঁচট খেতে পারে।
বাইডেনেরে প্রশাসন ইউরোপের সঙ্গে কতটা ঘনিষ্ঠ হবে তা নিয়ে হিসাব কষতে শুরু করেছেন ফরাসি কর্মকর্তারা। ফ্রান্সের প্রত্যাশা—ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে স্বাধীনসত্তা ধরে রাখবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ২০১৭ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি বিষয়টি তিনি লালন করে এসেছেন। ট্রাম্প ও ম্যাক্রোঁ প্রায় একই সময় দায়িত্ব নেন। স্বাভাবিকভাবেই ট্রাম্পের নীতি ম্যাক্রোঁকে প্রভাবিত করে। সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে ম্যাক্রোঁ বলেন, চীন বা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে ইউরোপের উচিত নিজস্ব অবস্থানের ওপর দাঁড়ানো। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের ‘ঐতিহাসিক মিত্র’ উল্লেখ করে বলেন, তাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও ভূ-রাজনৈতিক পার্থক্য রয়েছে।
তিনি এ কথার ওপর জোর দেন যে, ইউরোপকে নিজেদের স্বার্থেই চীন-মার্কিন দ্বৈরথ থেকে দূরে থাকা প্রয়োজন।ফাইভ-জি এবং ক্লাউড ডাটা স্টোরেজ প্রযুক্তির জন্য ইউরোপ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দুই বৃহত্ শক্তির ওপর নির্ভরশীল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৮ সালে ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে দেশটির ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর ফলে বিপাকে পড়ে ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করা ইউরোপীয় ফার্মগুলো। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইউরোপে অস্বস্তিতে ফেলে। ফ্রান্স শক্তিশালী হলে ইউরোপ শক্তিশালী হবে, এটি ম্যাক্রোঁর অন্যতম মূলমন্ত্র। কেবল ম্যাক্রোঁ নয়, ফ্রান্সের রাজনীতিরও অনেক দিন ধরে এটি এক ইস্যু।
উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা ন্যাটোর প্রতি প্যারিসের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটা মিশ্র। এটি শুরু হয়েছিল ১৯৬৬ সালে তত্কালীন প্রেসিডেন্ট চার্লস দ্য গল তখন ন্যাটোর কমান্ড থেকে বেরিয়ে যান। সায়েন্স পো ইউনিভার্সিটির জিয়োপলিটিক্স ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ক্রিশ্চিয়ান লিকুয়েন বলেন, ‘গল ফ্রান্সকে পশ্চিমমুখী হওয়া থেকে ফেরানোর উদ্যোগ নেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফ্রান্স যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্রে পরিণত হয়, এখন সে অবস্থা থেকে বের হওয়ার একটি লক্ষণ স্পষ্ট হচ্ছে।’ তার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ফ্রান্সের মূল্যবোধের ক্ষেত্রে অনেক মিল থাকলেও দুটি আলাদা দেশ। সূত্রঃ বিবিসি।